ঈশোপনিষদ

ঈশোপনিষদ

1) ঈশা বাস্যমিদং সর্বং য়ৎকিঞ্চ জগত্যাং জগৎ।
তেন ত্যক্তেন ভুঞ্জীথা মা গৃধঃ কস্যস্বিদ্ধনম্‌ ॥

অর্থ:- পরিবর্তনশীল এই জগতে সবকিছুরই ক্রমাগত পরিবর্তন হচ্ছে। তথাপি সব কিছু পরমেশ্বরের দ্বারা আবৃত। ত্যাগ অনুশীলন কর এবং সর্বভূতের চৈতন্যস্বরূপ আত্মায় দৃঢ় প্রতিষ্ঠিত হও। অপরের ধনে লোভ করো না।

2) কুর্বন্নেবেহ কর্মাণি জিজীবিষেৎ শতং সমাঃ।
এবং ত্বয়ি নান্যথেতোऽস্তি ন কর্ম লিপ্যতে নরে ॥

অর্থ:- শাস্ত্রবিহিত কর্ম করার ফলে কোন ব্যক্তি শত বৎসর বাঁচতে ইচ্ছুক হতে পারেন। এভাবে যিনি কাজ করেন তিনি তাঁর কর্মফলে লিপ্ত হন না। এছাড়া আর অন্য কোন পথ নেই।

3) অসূর্যা নাম তে লোকা অন্ধেন তমসাবৃতাঃ।
তাংস্তে প্রেত্যাভিগচ্ছন্তি য়ে কে চাত্মহনো জনাঃ ॥

অর্থ:- অজ্ঞানতার অন্ধকারে ঢাকা অনেক লোক আছে। যারা অবিদ্যার বশবর্তী হয়ে আত্মাকে অস্বীকার করে, তারাই মৃত্যুর পর সেই সব লোকে যায় ।

4) অনেজদেকং মনসো জবীয়ো নৈনদ্দেবা আপ্নুবন্ পূর্বমর্ষৎ।
তদ্ধাবতোऽন্যানত্যেতি তিষ্ঠৎ তস্মিন্নপো মাতরিশ্বা দধাতি ॥

অর্থ:- ব্রহ্ম এক ও অদ্বিতীয়। ব্রহ্ম একাধারে স্থির, আবার অপর দিকে চঞ্চল, মন অপেক্ষাও দ্রুতগামী। তিনি সব সময়ই সবার আগে রয়েছেন। ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে তাঁকে ধরা সম্ভব নয়। তিনি নিজে স্থির থেকেও অন্য সকলকে অতিক্রম করে যান। তিনি পরব্রহ্ম রূপে আছেন বলেই, বায়ু প্রাণীর দেহধারণের প্রচেষ্টাকে সফল করছেন।

5) তদেজতি তন্নৈজতি তদ্ দূরে তদ্বন্তিকে।
তদন্তরস্য সর্বস্য তদু সর্বস্যাস্য বাহ্যতঃ ॥

অর্থ:- তিনি (ব্রহ্ম) সচল হয়েও স্থির। তিনি দূরেও আছেন আবার কাছেও আছেন। তিনি (ব্রহ্ম) সব কিছুর ভেতরেও আছেন আবার সব কিছুর বাইরেও আছেন।

6) য়স্তু সর্বাণি ভূতানি আত্মন্যেবানুপশ্যতি।
সর্বভূতেষু চাত্মানং ততো ন বিজুগুপ্সতে ॥

অর্থ:- যিনি নিজের মধ্যে সকলকে দেখেন এবং সকলের মধ্যে নিজেকে দেখেন, তিনি কোন কিছু ঘৃণা করেন না।

7) য়স্মিন্ সর্বাণি ভূতানি আত্মৈবাভূদ্ বিজানতঃ।
তত্র কো মোহঃ কঃ শোক একত্বমনুপশ্যতঃ ॥

অর্থ:- যখন কোন ব্যক্তি সব কিছুর মধ্যে এক আত্মাকেই দেখেন এবং জানেন যে তিনি নিজেই সব কিছু হয়েছেন, তখন তিনি কোন কিছুকে ঘৃণাও করেন না বা কোন কিছুর প্রতি আসক্তও হন না।

8) স পর্যগাচ্ছুক্রমকায়মব্রণমস্নাবিরং শুদ্ধমপাপবিদ্ধম্‌।
কবির্মনীষী পরিভূঃ স্বয়ম্ভূর্যাথাতথ্যতোऽর্থান্‌ ব্যদধাৎ শাশ্বতীভ্যঃ সমাভ্যঃ ॥

অর্থ:- ব্রহ্ম সবখানেই আছেন। তিনি জ্যোতির্ময়। তাঁর শরীর নেই, শিরা বা ব্রণও নেই। তিনি শুদ্ধ। পাপ তাঁকে স্পর্শ করতে পারে না। তিনি সব কিছুই দেখেন। মনকে তিনিই নিয়ন্ত্রণ করেন। তিনি সর্বশ্রেষ্ঠ। তিনি স্বয়ম্ভু। তিনিই সর্বকালে প্রাণীর ভোগের জন্য যথোপযুক্ত বস্তুগুলির জোগান দিচ্ছেন।

9) অন্ধং তমঃ প্রবিশন্তি য়েऽবিদ্যামুপাসতে।
ততো ভূয় ইব তে তমো য় উ বিদ্যায়াং রতাঃ ॥

অর্থ:- শুধুমাত্র কর্মের অনুসরণ করাই অবিদ্যা। যারা এই কাজ করে, তারা অজ্ঞানের অন্ধকারে প্রবেশ করে। আবার যারা শুধুমাত্র জ্ঞানের চর্চাতেই রত থাকে, তারা আরও গভীর অন্ধকারে প্রবেশ করে।

10) অন্যদেবাহুর্বিদ্যয়াऽন্যদাহুরবিদ্যয়া।
ইতি শুশ্রুম ধীরাণাং য়ে নস্তদ্বিচচক্ষিরে ॥

অর্থ:- জ্ঞানীরা জ্ঞান ও কর্মের আলাদা আলাদা ফলের কথা বলেছেন। তাঁরাই আমাদের কাছে এই জ্ঞান ও কর্মের তত্ত্ব ব্যাখ্যা করেছেন। এই জ্ঞানীগণের কাছ থেকে আমরা জেনেছি ―।

11) বিদ্যাঞ্চাবিদ্যাঞ্চ য়স্তদ্বেদোভয়ম সহ।
অবিদ্যয়া মৃত্যুং তীর্ত্বা বিদ্যয়াऽমৃতমশ্নুতে ॥

অর্থ:- যিনি জ্ঞান ও কর্ম দুটোই যোগ্য বলে জানেন, তিনি কর্মের মাধ্যমে মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পান এবং জ্ঞানের দ্বারা অমরত্ব লাভ করেন।

12) অন্ধং তমঃ প্রবিশন্তি য়েऽসম্ভূতিমুপাসতে।
ততো ভূয় ইব তে তমো য় উ সম্ভূত্যাং রতাঃ ॥

অর্থ:- যারা কেবল প্রকৃতির উপাসনা করে, তারা গভীর অন্ধকারে প্রবেশ করে। আর যারা শুধুমাত্র জগৎকারণ ব্রহ্মের উপাসনাতেই রত, তারা আরও গভীর অন্ধকারে প্রবেশ করে।

13) অন্যদেবাহুঃ সম্ভবাদন্যদাহুরসম্ভবাত্‌।
ইতি শুশ্রুম ধীরাণাং য়ে নস্তদ্বিচচক্ষিরে ॥

অর্থ:- জ্ঞানীরা প্রকৃতি ও ব্রহ্মের উপাসনার আলাদা আলাদা ফলের কথা বলেছেন। যাঁরা আমাদের কাছে এই দুই প্রকার উপাসনার তত্ত্ব ব্যাখ্যা করেছেন, তাঁদের মুখে শুনেছি ―

14) সম্ভূতিঞ্চ বিনাশঞ্চ য়স্তদ্বেদোভয়ম সহ।
বিনাশেন মৃত্যুং তীর্ত্বা সম্ভূত্যাऽমৃতমশ্নুতে ॥

অর্থ:- যিনি ব্রহ্ম ও প্রকৃতি উভয়কেই অনুসরণীয় বলে জানেন, তিনি প্রকৃতির উপাসনার মাধ্যমে মৃত্যুকে জয় করেন এবং ব্রহ্মের উপাসনার মাধ্যমে অমরত্ব লাভ করেন।

15) হিরণ্ময়েন পাত্রেণ সত্যস্যাপিহিতং মুখম্‌।
তৎ ত্বং পূষন্নপাবৃণু সত্যধর্মায় দৃষ্টয়ে ॥

অর্থ:- সত্যের মুখ উজ্জ্বল সোনার পাত্রের দ্বারা আবৃত। জীবন ও জগতের ধারক হে সূর্য, তুমি সেই আবরণটি দয়া করে সরিয়ে দাও যাতে সত্যজিজ্ঞাসু আমি, সত্যকে দর্শন করতে পারি।

16) পূষন্নেকর্ষে য়ম সূর্য প্রাজাপত্য ব্যূহ রশ্মীন্‌ সমূহ।
তেজো য়ৎ তে রূপং কল্যাণতমং তত্তে পশ্যামি
য়োऽসাবসৌ পুরুষঃ সোऽহমস্মি ॥

অর্থ:- জগতের পালক হে সূর্য! একাকী গমনকারী হে সূর্য! সকল প্রাণীর সংযমকর্তা হে সূর্য! প্রজাপতি-পুত্র হে সূর্য! আপনার রশ্মি সংযত করুন। আপনার তেজ সংবরণ করুন। আপনার সুন্দর রূপ আমাকে দেখার সুযোগ দিন। ঐ সূর্যমণ্ডলে যিনি আছেন, তিনিই আমি।

17) বায়ুরনিলমমৃতমথেদং ভস্মান্তম শরীরম্‌।
ॐ ক্রতো স্মর কৃতং স্মর ক্রতো স্মর কৃতং স্মর ॥

অর্থ:- এখন সেই মৃত্যু আসন্নপ্রায়। আমার প্রার্থনা যেন আমার প্রাণবায়ু বিশ্বপ্রাণে বিলীন হয়। যেন আমার দেহ আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যায়। হে মন, সারা জীবনে তুমি যা কিছু করেছ তা চিন্তা কর। নিজের কৃতকর্ম স্মরণ কর।

18) অগ্নে নয় সুপথা রায়ে অস্মান্‌
বিশ্বানি দেব বয়ুনানি বিদ্বান্‌।
য়ুয়োধ্যস্মজ্জুহুরাণমেনো
ভূয়িষ্ঠাং তে নম‍উক্তিং বিধেম ॥

অর্থ:- হে অগ্নি, যা হিতকর তা লাভের জন্য অনুগ্রহ করে আমাদের সুপথে চালিত কর। হে দেব, আমাদের সব কৃতকর্ম এবং চিন্তা তুমি জান। আমাদের মধ্যে যা কিছু অশুভ, অনুগ্রহ করে তা দূর কর। আমরা তোমাকে বারবার প্রণাম করি।

Scroll to Top